প্রচন্ড তাপ প্রবাহে মরে যাচ্ছে চারা
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩, ০১:৩৭ রাত
সারা দেশের ন্যায় বগুড়াতেও প্রচন্ড তাপ প্রবাহ হলেছে। এর ফলে সবজি নার্সারী পল্লীতে মরিচের চারার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে বগুড়ায় দেখা দিয়েছে মরিচের (হাইব্রিড) চারার সংকট। তবে শিগগিরই চারার সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর ও শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ফুলবাড়ি সবজি নার্সারি পল্লীর কৃষকরা মরিচের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মরিচের বেডে নতুন করে বীজ ফেলছেন। তৃতীয় পর্যায়ে আবারও মরিচের বীজ ফেলে চারা রোপন করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানালেন বগুড়া সবজি নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগরে সবজি নার্সারী ও শেরপুর উপজেলার ফুলবাড়ী পল্লীতে মরিচসহ অন্যান্য সবজির চারা উৎপাদন জুন মাস থেকে শুরু হয়েছে। চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। নার্সারী মালিকদের দম ফেলার ফুরসত নেই। প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় দফা বীজ থেকে চারা বেরিয়েছে। প্রথমে প্রচন্ড তাপ প্রবাহ মরিচের চারা সহ্য করতে পারেনি। শেরপুর উপজেলার সিমাবাড়ী ও ফুলবাড়ী এবং শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগর থেকে প্রতিবছর প্রায় ১২ কোটি টাকার মরিচের চারা কেনাবেচা হয়ে থাকে।
শাহানগর সবজি নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন জানান, এ বছর প্রায় শাজাহানপুর ৬ কোটি ও শেরপুর উপজেলায় ৬ কোটি মরিচের চারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু শুরতে জুনমাসে লাগানো বীজ থেকে উৎপাদিত চারা উচ্চ তাপমাত্র সহ্য করতে না পারায় (বিশেষ করে মরিচের) চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন দফা মরিচের চারা তৈরি হয় নার্সারীতে। প্রথম দফা কৃষক তাপদাহে ধাক্কা খেয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানেরা চেষ্টা করছে।
চারার বেডে প্রথমে সাদা পলিথিন তারা উপর কালো পলিথিন দিয়ে সূর্যের তাপ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সফলও হয়েছে তারা।জুন মাসে নার্সারীগুলো আগাম মরিচের (হাইব্রিড জাতের) চারা পূর্ণতা লাভ করে। তখন দেশের জামালপুর, রংপুর, নীলফামারিসহ অনেক জেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় মরিচের চারা ক্রেতাদের উপস্থিতি কমে যায়। তখন চারা বেশি বড় হতে গেলে ক্রেতাদের অনুপস্থিতি ঘটলে নার্সারী মালিকরা তাদের চারা তুলে ফেলে দিয়ে নতুন করে বীজ বপন করে।
এরই মাঝখানে মরিচের চারার সংকট দেখা দিয়েছে। ৮০ পয়সার একটি চারা ২ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। কোন কোন নার্সারী ২ টাকারও অধিক দামে একটি চারা বিক্রি করছে।
এ বছর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মরিচের চারা উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিল শাহানগরের নার্সারী মালিকরা। প্রচন্ড গরম ও প্রখর সূর্যতাপে বীজ থেকে চারা গজাতেই তা মাঠেই শুকিয়ে গেছে।
শাহানগর সবজি নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন জানান, এবার তাদের মরিচের চারা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ৫ কোটি পিস। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার কারণে প্রথম দফায় প্রায় ৫০ শতাংশ চারা নষ্ট হয়েছে।
তিনি জানান শাহানগরে দুইশ’ থেকে আড়াই শ’ নার্সারী আছে। জুন মাসের শুরুতে যে মরিচের বীজ বেডে ফেলানো হয়েছিল অধিক তাপমাত্রায় তার ৫০ শতাংশ চারা নষ্ট হয়েছে। ফলে এখন শুধু মরিচের চারার ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় জুলাই বীজ ফেলা হয়েছে। সেই বীজ থেকে যে চারা জন্মাবে তা অল্প দিনে মধ্যে বিক্রি শুরু হবে। কিন্তু জুন মাসে যে বীজ থেকে মরিচের চারা হয়েছিল অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৫০ শতাংশ চারা নষ্ট হয়েছে। তাই মরিচের চারার সংকট দেখা দিয়েছে।
ভাই ভাই নার্সারী মালিক উজ্জ্বল হোসেন জানান, প্রথম দফার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। দ্বিতীয় দফায় নতুন করে নতুন উদ্যোমে জমি চষে বীজ ফেলেছেন নার্সারী মালিকরা। প্রকৃতি রুষ্ট হলেও নার্সারী মালিকরা হাল ছাড়তে নারাজ। প্রথম দফার কিছু চারা বিক্রি করেছেন এবং কিছু নষ্টও হয়েছে। এখন দ্বিতীয় দফায় আবার বীজ ছিঁটাচ্ছেন চারার বেডে। দ্বিতীয় দফার চারা বিক্রি শেষ হলে আবার তৃতীয় দফায় বীজ ফেলবেন। এই ভাবে যতদিন চারার চাহিদা থাকবে ততদিন তারা চারা উৎপাদন করবেন। নার্সারী সমিতির সদস্যরা আবার আশায় বুক বেঁধেছেন। তারা আশা করছেন মরিচের চারার সাময়িক সংকট অচিরেই কেটে যাবে।
শাজাহানপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোস্তাফিজার রহমান জানান, প্রচন্ড গরমে জুন মাসের কিছু চারার ক্ষতি হয়েছে। তবে আরো দুই দফায় সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে নার্সারী মালিকরা। তবে জুন মাসে আগাম মরিচের চারা বিক্রি করতে ক্রেতা না পাওয়ায় অনেক নার্সারী মালিককে বড় চারা তুলে ফেলে দেন। এটিও মরিচের চারা সংকটের কারণ বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান, হাইব্রিড মরিচের চারা ভারত থেকে আমদানি করে থাকে বিভিন্ন কোম্পানি।
জামালপুর জেলা থেকে মরিচ ও কপির চারা কিনতে আসা রবিউল আলম জানান, একমাস আগে প্রতি হাজার মরিচের চারা ৩শ‘ টাকায় কিনেছেন। সেই চারা এখন ১৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ বছর কৃষক মরিচের দাম ভালো পাওয়ায় তারা মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকেছে। মরিচের চারার দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক। সেই সাথে বাঁধাকপি ও ফুলকপি চারার দাম বেড়েছে। দেশের ২০ থেকে ৩০ টি জেলার কৃষক বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগর থেকে চারা কিনে থাকে।