নিজ ছেলেকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত বাবা র্যাব-১১ ও র্যাব-৮ এর যৌথ অভিযানে গ্রেফতার
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩, ০৯:৩৫ রাত
ছবি সংগৃহীত
তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল গোপন তথ্যের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামীর অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ফলশ্রতিতে, র্যাব উক্ত আসামীকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ এর অভিযানে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ ২৩৩০ ঘটিকায় পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার পায়রা বন্দর এলাকা হতে মোঃ জয়নাল গাজী (৩৬), পিতাঃ গনি গাজী’কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী তার অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সাথে আসামি জয়নাল গাজীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এ বিষয়ে মা ও ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে পার্শ্ববর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজিবাড়ির আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯) বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন। এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউয়ের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়াবিবাদ হতো। এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তারই আলোকে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমা বেগমকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে মা খুকি বেগম নিজ গৃহে পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও সহযোগীদের দিয়ে ছেলে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে কেটে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানান, ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গেছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মতলব ফেরিঘাটে পার হওয়ার সময় আরিফের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ভিক্টিমের স্ত্রী শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং- ০৫, তারিখ- ১৯(১১)২০১৫; ধারা- ৩০২/৩৪, দণ্ডবিধির ১৮৬০। বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চাঁদপুর বিচার শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৩ আগস্ট ২০২৩ তারিখে ভাড়াটিয়া খুনির মাধ্যমে আপন ছেলে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মা খুকি বেগম (৫০) ও জয়নাল গাজীকে (৩৫) মৃত্যুদণ্ড এবং সহযোগী দুই আসামি ইউছুফ মোল্লা (৩৬) ও মাহবুব মোল্লাকে (৩৮) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আসামীর স্বীকারোক্তি মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতে গ্রেফতার এড়াতে ঘটনার পর পরই জয়নাল গাজী চাঁদপুর থেকে পালিয়ে ঢাকা জেলার সাভার ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং পরবর্তীতে এ নতুন ঠিকানায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকে এবং ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি সে পলাতক ছিলেন।
এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামীকে ইতিমধ্যে র্যাব-১১ গ্রেফতার করলেও ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামী এখনো পলাতক আছেন। পলাতক আসামীকে গ্রেফতারে র্যাব-১১ এর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।