মাদকের গডফাদার ইউপি মেম্বার, মাসে আয় ২ কোটি
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ০৫, ২০২৩, ১১:০২ রাত
ছবি সংগৃহীত
কক্সবাজারসহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অবৈধ মাদক, অস্ত্র ও অন্যান্য চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে র্যাব নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। ইতিপূর্বে র্যাব কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী থেকে নতুন মাদকের সর্ববৃহৎ চালান ২৪.২ কেজি উদ্ধার করে। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত আরসা'র শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব। এভাবে র্যাব ফোর্সেস দেশব্যাপী শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য অপরাধীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রেখেছে।
এরই ধারাবাহিকতায়, গত রাতে র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফের কাটাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে চোরাকারবারির অন্যতম মূলহোতা কক্সবাজারের শীর্ষ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফরুল ইসলাম প্রকাশ বাবুল মেম্বার (৪২), পিতাঃ আব্দুর রশিদ, টেকনাফ, কক্সবাজারকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় ৫৫০০০ পিস ইয়াবা, ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
ছবি সংগৃহীত
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত বাবুল কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকার একজন অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী। স্থানীয় এলাকা টেকনাফে সে পাশ্ববর্তী দেশ হতে মাদক চোরাচালানের গডফাদার হিসেবে চিনতো। গ্রেফতারকৃত বাবুল মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য এলাকায় ২০-২৫ জনের একটি চক্র গড়ে তোলে। গ্রেফতারকৃত বাবুল মাদক ব্যবসার পাশাপাশি এলাকায় চাঁদাবাজি, স্বর্ণ চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্র, জোরপূর্বকভাবে অবৈধ বালু উত্তোলন, অবৈধভাবে চোরাই পথে গবাদি পশু চোরাচালান, অবৈধভাবে পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো বলে জানা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত বাবুল ২০০৫ সালের পরবর্তীতে টেকনাফ এলাকায় মাদক ও অন্যান্য চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পরে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ পথে মাদক এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত। ২০১৭ সালে এলাকার অপর এক মাদক ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমানের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পলাতক তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেনের সাথে তার পরিচয় হয়। নবীর সাথে পরিচয়ের পর থেকে গ্রেফতারকৃত জাফর বিশদ আকারে মাদক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতারকৃত জাফর পলাতক নবী হোসেনের সাথে চুক্তি করে চিংড়ি ব্যবসার আড়ালে রাতে আধারে পার্শ্ববর্তী দেশে হতে নাফ নদী দিয়ে মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালান করে আসছে বলে জানা যায়। সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে মাদক সহ অন্যান্য চোরাকারবারির সময় তার দলের ২০-২৫ জন সশস্ত্র সদস্য পাহাড়া দিয়ে চালান বাংলাদেশে পৌঁছাতো। গ্রেফতারকৃত বাবুল পার্শ্ববর্তী দেশ হতে সপ্তাহে ৪/৫টি ইয়াবার চালান এনে অস্ত্রধারী কেরিম্যানদের সহযোগিতায় বালুখালী ক্যাম্প সংলগ্ন তার নিয়ন্ত্রিত বেশকিছু চিংড়ির খামারের ভিতরে রাখতো বলে জানা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আনা প্রতি চালানে প্রায় ২ লক্ষ পিস ইয়াবা থাকতো এবং তা দেড় লক্ষ টাকায় কিনে এনে প্রায় ৩/৪ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করতো। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত বাবুল পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে স্বর্ণ এনে তা চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করতো।
গ্রেফতারকৃত জাফরুল ইসলাম ২০০১ সালে চট্টগ্রাম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে ভর্তি হয়ে ১ বছর পড়াশোনা করার পর তা বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে স্থানীয় কলেজ হতে বিএ পাশ করে। সে ২০০৫ সালে পালংখালি এলাকায় জাবু নামের এক ব্যক্তির খুনের দায়ে ঐ মামলার আসামি হয় এবং চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকে। তার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে টেকনাফ থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের হয়। সে ২০১৭ সালে জাবু হত্যা মামলায় প্রায় ২ মাস কারাভোগ করে সে জামিনে বের হয়ে আসে। সে অবৈধ অস্ত্র মাদক ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অবৈধভাবে কক্সবাজারে বিলাশ বহুল ফ্ল্যাট, ডামট্রাক, ট্রাক, এলাকাতে জমি এবং মাছের প্রজেক্টসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিপুল পরিমান সম্পদ গড়ে তোলে। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় হত্যা, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে ০৯টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।