কমলার আকার বড় হওয়াতে খুশি, হতাশ উইপোকার আক্রমণে
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৩, ১১:০১ রাত
ছবি সংগৃহীত
মৌলভীবাজারের জুড়ী পাহাড়ি এলাকায় উঁচু-নিচু টিলায় সারি সারি কমলালেবুর গাছের ডালে ডালে দোল খাচ্ছে পাকা ও আদা পাকা কমলা। এ অঞ্চলের কমলালেবুর স্বাদ ভালো হওয়ায় ব্যাপক চাহিদা ও নাম রয়েছে দেশজুড়ে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন তেমন ভালো না হলেও কমলার আকার বড় হওয়ায় খুশি কমলাচাষিরা। অন্যদিকে এ বছর খরা বেশি ছিল বিধায় উইপোকার আক্রমণে গাছগুলো মরে যাওয়ায় হতাশ চাষিরা এতে কপালে চিন্তার ভাঁজ।
জানা যায়, কমলাচাষিরা পোকামাকড় দমনে অভিনব পদ্ধতি হিসেবে সেক্সফরমুন ফাঁদ ও আলোক ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এটি পোকামাকড় দমনের সঠিক একটি পদ্ধতি। ফলে অনেক বাগানে কমলার আকার বড় ও ফলন ভালো হয়েছে।
কৃষিবিদদের মতে, কমলা একটি ছায়া পছন্দকারী বৃক্ষ। ফলদ বৃক্ষের ছায়ায় কমলা চাষাবাদ ভাল হয়। জুড়ী গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লালছড়া, শুকনাছড়া, ডুমাবারই, লাঠিটিলা, লাঠিছড়া, হায়াছড়া, কচুরগুল এবং পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের কালাছড়া, সাগরনাল ইউনিয়নের পুটিছড়া ও জায়ফরনগর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরসহ অন্যান্য গ্রামের টিলাবাড়িগুলোতে কমলার পাশাপাশি জারা লেবুর বাগান ও রয়েছে। আর এসব বাগানে চাষিরা সর্বশ দিয়ে পরিচর্যায় খাটতি নেই।
কৃষকরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে একেকটি বাগান থেকে প্রায় ৩/৪ লাখ টাকার ফলন পাওয়া যায়। কমলা চাষে যেমন খরচ কম, তেমনি শ্রমও দিতে হয় না। কমলা চাষে এই এলাকার চাষিরা স্বাবলম্বীও হচ্ছেন।
জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৯৬ দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে আনুমানিক ৮৪টি কমলা বাগান গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে শতকরা ৮০ ভাগ বাগান রয়েছে। এসব এলাকায় অধিকাংশ খাশি জাতের কমলা চাষাবাদ হচ্ছে। এসব বাগান থেকে চলতি মৌসুমে আনুমানিক ৩০০ মেট্রিক টন কমলালেবুর ফলন প্রাপ্তির আশা রয়েছে।
উপজেলার লালছড়া গ্রামের কমলাচাষি মোরশেদ মিয়া, রহিম মিয়া বলেন, ‘এ বছর কমলালেবুর ফলন বেশি হয়নি। অন্য বছরের তুলনায় কম হয়েছে। আর যা হয়েছে তাও উইপোকার আক্রমণে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। এবার কমলার বাজারমূল্য গত বছরের চেয়ে বেশি, আকারেও ছোট।’ তারা জানান, ইতোমধ্যে ২০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি হয়েছে। আরও ৫০-৭০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন।
জানা গেছে, সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে গাছপ্রতি ১০-২৫০ এর অধিক ফল পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি গাছের আয়ু ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৫-৬ বছর ধারাবাহিকভাবে গাছপ্রতি ফলন ভালো হয়।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল আলম খাঁন জানান, একক বাগান হলে সানবার্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কৃষকরা যদি সঠিকভাবে সুষম সার এবং পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের জন্য নিয়মিত বালাইনাশক স্প্রে/সেক্সফরমুন ফাঁদ ব্যবহার করে তাহলে ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি কমলার আকারও বড় হবে।
এবার কমলার ফলন কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বছর খরা বেশি ছিল এবং গাছগুলো পুরাতন রোগাক্রান্ত। তা ছাড়াও এ অঞ্চলের কৃষকরা জারা লেবু ফলনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমাদের নিয়মিত তদারকি অব্যাহত আছে।’